ফটোগ্রাফির জগতে নারী: একটি অসম্পূর্ণ গল্প
Bengali (বাংলা) translation by Syeda Nur-E-Royhan (you can also view the original English article)
আমাদের জীবনে নারীর ভূমিকার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা অসীম। এই দিনটি আমাদের অগ্রগতি এবং অব্যাহত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। একজন নারী এবং একই সাথে টুটস প্লাসের ফটো এবং ভিডিও ইন্সট্রাক্টর হিসেবে আমি ফটোগ্রাফি জগতে নারীর ভূমিকা পর্যালোচনা করতে এসেছি। নারীরা কিভাবে ফটোগ্রাফির জগতে নিজেদের জীবন গড়ে তুলছে এবং এখনও দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে?
ইতিহাস
ফটোগ্রাফির শুরু থেকেই নারী এখানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। ফটোগ্রাফি আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া না হলেও নারী প্রতিনিয়ত এই জগতের পথিকৃৎদের সাথে কাজ করে আসছে। কখনও স্বামীর জন্য ফটো প্রিন্ট করে দিয়েছে, আবার কখনও নিজেরাই ছবি তুলেছে। ফটোগ্রাফির আবিষ্কারক জোসেফ নিয়েপ্স তাঁর সমস্ত গবেষণা নিয়ে তাঁর শ্যালিকার সাথে আলোচনা করতেন। ফটোগ্রাফির অগ্রদূত হেনরি ফক্স ট্যালবটের স্ত্রী কনস্ট্যান্স ট্যালবট (১৮১১-১৮৮০) এবং তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ অ্যানা অ্যাটকিন্স (১৭৯৯-১৮৭১) ছিলেন প্রথম নারী ফটোগ্রাফার। ট্যালবট এবং তাঁর সঙ্গীরা যখন ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়ার বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তখন তাঁরা তাঁদের সাথে সাথে ছবি তোলার চর্চা করতেন।






ফটোগ্রাফি শিল্পে রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন সেরাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় আজকের দ্যা রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনিই এ্যালবামে ভিজিটিং কার্ড রাখার চর্চা চালু করেন। অভিজাত নারীদের মধ্যে এই রীতি জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ায় ফটোগ্রাফ এ্যালবাম তাঁদের পদমর্যাদার প্রতীকে পরিণত হয়। এতে করে ফটোগ্রাফিক সংস্কৃতির কদর ও চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। ১৮৮০ সালের দিকে কোডাক ফটোগ্রাফিতে নারীর উত্তরোত্তর অংশগ্রহণ লক্ষ্য করে কোডাক গার্ল নামে একটি প্রচারাভিযান চালু করে। একই সময়ে, নারী ফটোগ্রাফার এবং সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায় ফটোগ্রাফিকে নারীর জন্য উপযুক্ত পেশা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৮৯৭ সালে, লেডিজ হোম জার্নাল "হোয়াট উইমেন ক্যান ডু উইদ এ ক্যামেরা" নামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে।



ব্রিটিশ এবং আমেরিকান আদমশুমারি অনুযায়ী দেখা যায় যে ১৯০০ এর মধ্যেই সেখানে অন্তত ৭০০০ পেশাদার নারী ফটোগ্রাফার ছিলেন। নারীরা এই পেশার প্রায় ২০ শতাংশ জনবল ধরে রেখেছিলেন যেই সময়ে নারীদের জন্য পেশাজীবী হওয়াটাই ছিল একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। শুধু তাই নয়, ফটোগ্রাফি স্টুডিওগুলো নারীদের বা পারিবারিক ছবি তুলতে " নারী অপারেটর" নিয়োগ করায় তাদের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল। এর কারণ হচ্ছে যার ছবি তোলা হচ্ছে তার অঙ্গভঙ্গি ঠিক করে দিতে অনেক সময় শারীরিক সংস্পর্শ হতেই পারে। সেক্ষেত্রে যদি নারী ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তোলা হয় তাহলে মহিলারা এবং তাদে পরিবারের সদস্যরাও ছবি তুলতে আরও বেশি সাবলীল ও আগ্রহী হবে।
নারী বাঁধাধরা পেশায় নিজেকে খাপ খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টার বদলে বরং ফটোগ্রাফি পেশাকে নিজেদের প্রয়োজনমতো মত গড়ে নিচ্ছে।
বিজ্ঞান নয়, বরং শিল্প হিসেবে ফটোগ্রাফি মাধ্যমের বেড়ে ওঠার পিছনে অবদান রেখেছেন নারীরা। আয় রোজগারের বাড়তি চিন্তা না থাকায় জুলিয়া মার্গারেট ক্যামেরন (১৮১৫-১৮৭৯) এবং ফ্রান্সেস বেঞ্জামিন জনস্টনের (১৮৬৪-১৯৫২) মতো নারীরা নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে পেরেছেন এবং সেই সাথে ছবি তোলার স্টাইল ও ছবির বিষয়বস্তু নির্বাচনে ফটোগ্রাফিকে দিয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা। এমনকি, ইমেজ কম্পোজিট করার ধারণাও সেই আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে বেশ জনপ্রিও হয়ে উঠেছিল। আঁকিবুঁকি আর সেলাইয়ের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নারীরা ফটো কোলাজ তৈরি করতেন তখন।






কিন্তু যদি নারীরা ফটোগ্রাফির শুরু থেকেই এতোটা সক্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে কী এমন হয়েছিল যে এখন এটি একটি পুরুষ অধ্যুষিত মাধ্যমে পরিণত হয়ে গিয়েছে?
ফটোসাংবাদিকতা
দ্বন্দ্ব-সংঘাত বা চলমান ঘটনাবলীর প্রমাণ ধরে রাখতে ফটোগ্রাফির ব্যবহার শুরু হতে খুব বেশি দেরি হয়নি। ফটোগ্রাফি প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে যন্ত্রপাতির ওজন হালকা হয়ে আসতে লাগলো, সেই সাথে ফটো প্রসেসিং হল আরও সহজ। এতে করে ফটোগ্রাফারদের জন্য চলাফেরা করাও সহজ হয়ে উঠলো। ফটোগ্রাফারদের ঘরে বাইরে এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও কাজ করতে হয়। কিন্তু যুদ্ধের ময়দান, অর্থনীতি, বা রাজনীতি কোনটাই নারীদের কাজের ক্ষেত্র ছিল না।
এর মধ্যেও কিছু নারী সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করে ফটোসাংবাদিকদের অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেমন, গেরডা টারো (১৯১০-১৯৩৭) রবার্ট কাপার সাথে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের ছবি তোলার কাজ করেছেন। যুদ্ধের ছবিতে তার নিজস্ব স্টাইল তুলে ধরার জন্য বিখ্যাত ছিলেন টারো। তিনি যে কোন পরিস্থিতির আবেগী সত্ত্বাকে তুলে ধরতে পারতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যরা সে সমস্ত ব্যক্তিগত ও শারীরিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতো তা টারোর ছবিতে ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৩৭ সালে স্পেনের যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে কর্মরত অবস্থায় নিহত হন।



ক্রিস্টিনা ব্রুম (১৮৬২-১৯৩৯) ছিলেন ফটোসাংবাদিকতার জগতে আরেক পথিকৃৎ নারী। ব্রুম ছিলেন সব জায়গায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো একজন ফটোসাংবাদিক। তিনি শহর থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্র, নারীর ভোটাধিকারের আন্দোলন, রাজ্যাভিষেক বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত কাজ করেছেন। টারোরমতই ব্রুমও এই সমস্ত ঘটনাবলীতে ব্যক্তিগত আবেগ ধরে রাখতে ছবি তুলেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশের সাদাসিধে কিন্তু শৈল্পিক ছবি তোলার কারণে তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।



ডরোথিয়া লঙ্গে (১৮৯৫-১৯৬৫) বিখ্যাত ছিলেন গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় অভিবাসীদের ছবি তোলার কারণে। লঙ্গে তার পেশাগত জীবনে অনেকগুলো সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে গেছেন। তবে ১৯৩০ সালে তাঁর তোলা আবেগঘন ছবিগুলো দিয়েই তিনি দারিদ্র্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ধারণা বদলে দিতে পেরেছিলেন।



মার্গারেট বুর্ক-হোয়াইট (১৯০৪-১৯৭১) ছিলেন সংঘাতমূলক ছবি তোলার জন্য সুপরিচিত প্রথম নারী ফটোসাংবাদিক। গেরডা টারোর কাজ তাঁর পুরুষ সঙ্গীর প্রতি জনগণের আগ্রহের কারণে অনেকটাই ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। এসব সত্ত্বেও বুর্ক-হোয়াইট একাই কাজ করে গিয়েছেন যদিও তখন নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রগতি তাঁকে সমর্থন যুগিয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বুর্ক-হোয়াইটকে আমেরিকান সৈন্যদলের সাথে চলাফেরার এবং তাদের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে, তিনি কোরিয়ান যুদ্ধ এবং গান্ধীর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ছবি তোলার মধ্য দিয়ে তাঁর সংঘাতমূলক ছবি তোলার চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।



তাঁদের মতো নারীরা চলমান ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে জনগণের চিন্তা চেতনা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। পুরুষ অধ্যুষিত এই জগতে তাঁরা ছিলেন ব্যতিক্রম।
ফটোসাংবাদিকতার এই ক্ষেত্রটিতে এখনও পুরুষদেরই রাজত্ব। তবে পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যতো বেশি নারী যুদ্ধ বা সংঘাতমূলক ক্ষেত্রে ছবি তোলায় আগ্রহী হবে, ততোই যুদ্ধের গল্প জানার ক্ষেত্র বিস্তৃত হতে থাকবে। লিনজি অ্যাডারিও (১৯৭৩-) এবং তাঁর নারী সহকর্মী- কেট ব্রুকস, স্টেসি পিয়ারসাল, আলিকযান্দ্রা ফাযিনা, আমিরা আল-শারিফ, এবং রেবেকা কোলার্ড হচ্ছেন এমন কিছু নাম যারা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও সংঘাতের ছবি তুলে যাচ্ছেন। পুরুষ সহকর্মীদের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, কখনও কখনও এমন কিছু কাহিনীর খোঁজ পাচ্ছেন যার নাগাল পাওয়া পুরুষদের জন্য অসাধ্য। মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দাদের গৃহস্থালি জীবনে যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরেছেন নারী ফটোসাংবাদিকেরা। দারফুর ও কঙ্গোতে কিভাবে নারীদের বন্দী করে ধর্ষণ করা হচ্ছে সেই গল্পও তাঁরা উদ্ঘাটন করেছেন। তাঁরা বলেছেন সোমালিয়াতে এইচআইভি আক্রান্ত নারীদের দুর্দশার গল্প। নিরাপত্তার খোঁজে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া আফগান শিশু রিফিউজিদের মর্মান্তিক কাহিনী প্রকাশ করেছেন। উত্তর আমেরিকায় পারিবারিক সহিংসতার নগ্ন চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁরা, আরও কতো কি।



নারী ফটোসাংবাদিকদের সংখ্যা এখনও দুঃখজনকভাবে কম; তবে এর পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। শতকরা মাত্র ২০ জন ফটোসাংবাদিক নারী। ফটোসাংবাদিকতা, বিশেষ করে যুদ্ধ ও সংঘাতমূলক ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফির কাজ অত্যন্ত কঠিন এবং শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে ধকল যায় অনেক বেশি। তবে নারীরা আমাদের কাছে এমন কিছু চলমান ঘটনা ও গল্প তুলে ধরতে পারছেন যা সাধারণত আমরা জানতে পারি না বা কখনও কখনও তাঁরা নারী না হলে জানা সম্ভব হত না।
ছবি তোলা মেয়েলী কাজ
আপনি যদি পরিস্থিতি বিচার না করে ফটোগ্রাফি জগতে নারীর সংখ্যা যাচাই করেন তাহলে নির্ঘাত হতাশ হবেন। ১৯৮৩ সালে মাত্র ২০% ফটোগ্রাফার ছিলেন নারী। বর্তমানে, ফটোসাংবাদিকদের ২০% হচ্ছেন নারী এবং পেশার বিচারে সম্পূর্ণ ফটোগ্রাফিক প্রফেশনে এই লিঙ্গ বৈষম্য প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরেও, আমেরিকান ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের ২০১২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী এই ৫০-৫০ ভাগাভাগির প্রভাব পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে নেই। দ্যা ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর দ্যা আর্টসের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে নারী ফটোগ্রাফারদের গড় আয় পুরুষ ফটোগ্রাফারদের অর্ধেক মাত্র।
তবে এই পরিসংখ্যানের আশেপাশে দৃষ্টি দিলে একটি ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে। ফটোগ্রাফিতে যেসব নারীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তাঁরা মূলত গভীর আবেগ ও ভালবাসা নিয়ে কাজটি করছেন এবং সেই সাথে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফিতে যে স্বাধীনতাটুকু আছে তা পুরোটাই উপভোগ করছেন। নারী বাঁধাধরা পেশায় নিজেকে খাপ খাওয়ানোর বৃথা চেষ্টার বদলে বরং ফটোগ্রাফি পেশাকে নিজেদের প্রয়োজনমতো মত গড়ে নিচ্ছে।
ক্লিকিন মমস হচ্ছে নারী ফটোগ্রাফারদের একটি অনলাইন কমিউনিটি। ২০০৮ সালে বন্ধু-বান্ধবদের একটি ছোট দল নিজেদের মধ্যে ফটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলতে অনানুষ্ঠানিকভাবে এটি শুরু করে। এরপর এই ছোট্ট উদ্যোগটিই বেড়ে উঠে এবং প্রায় ১৬,০০০ "পেশাদার ফটোগ্রাফার, পেশাদার হতে আগ্রহী, এমনকি নিজেদের বাচ্চার ছবি তুলতে ভালবাসে এমন মায়েদের" একটি কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে ক্লিকিন মমস। আর যাই হোক, এটাকে খোশ গল্পের আড্ডা ভেবে ভুল করবেন না। এখানে যারা নারী সদস্য হিসেবে আছেন তাঁরা তাঁদের শিল্প সত্ত্বার বিকাশ এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যার উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে এই কাজটিই তাঁরা অনলাইন নেটওয়ার্কে সমমনা নারীদের সাথে যুক্ত হয়ে করছেন।
"ফটোগ্রাফারের যোগ্যতা হিসেবে কোন কোন বিষয়কে বিবেচনা করা উচিত সেই বিষয়ে আমরা আমাদের চিন্তাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটি সাথে আমরা প্রমাণ করতে চেষ্টা করছি যে পেশাদারিত্ত্বের মর্যাদার উপর ফটোগ্রাফার হিসেবে কারও যোগ্যতা নির্ভর করে না"।
সিইও সারা উইকারসন স্বীকার করেন যে ফটোগ্রাফি শেখা এবং এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু অইসব জায়গায় পুরুষের আধিপত্য বেশি বলে নারী ফটোগ্রাফাররা সেখানে কিছুটা চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হন। প্রক্রিয়াটি খুব সরল: সবচাইতে প্রথমে আসবে যন্ত্রপাতি, তারপর সেটির ব্যবহার শিখতে হবে, তারপর কাজে ঢুকতে হবে, এবং সবশেষে কাজের পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে। সাধারণত প্রক্রিয়ার শেষ মাথায় এসে রাশ টানাতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সারার অভিজ্ঞতা বলে, নারী ফটোগ্রাফাররা এমন একটা কমিউনিটি খুঁজে পেতে চান যেখানে ফটোগ্রাফাররা তাঁদের নিজ নিজ ছন্দে কাজ করতে একে অন্যকে সাহায্য করবেন। কিছু নারী ফটোগ্রাফারের জন্য এটাই হচ্ছে পেশাগতভাবে কাজ করার ধাপ। আবার কারও কারও জন্য পারিবারিক উৎসবে সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার জন্য শেখা। তবে প্রায় সব নারী ফটোগ্রাফারের জন্যই এটি হচ্ছে পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিকল্প বেছে নেওয়ার একটা সুযোগ।



অনলাইনের আলোচনাগুলো পড়লে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যে স্বাভাবিক সাবলীলতা রয়েছে তা খুব সহজেই চোখে পড়ে। ফটোগ্রাফি নারীদের জন্য এমন একটি পেশা যা একই সাথে তাদের ভালবাসার জায়গা আবার তারা চাইলে ঘরে বসে সন্তানের দেখাশোনার পাশাপাশি কাজ করতে পারে। যদিও সব নারী ফটোগ্রাফারই এমনটা চান তা নয়। তবে স্বভাবতই যেসব নারী ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ভারসাম্য আনতে চান তাদের জন্য এটা একটা উপায় হতেই পারে। ক্লিকিন মমসের সাফল্য দেখে এটা বলা যায় যে হাজারো নারী ইতোমধ্যে এই সমাধান বেছে নিয়েছেন। শুধুমাত্র একটি অনলাইন ফোরাম হিসেবে নয় বরং ক্লিকিন মমস এখন সেমিনার, ওয়ার্কশপ, এমনকি সহকর্মীদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে যেখানে পেশাজীবী ফটোগ্রাফারদের কাজের মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অনুসরণ করা হয়। এছাড়া তাদের রয়েছে একটি দ্বি-মাসিক পত্রিকা, নারীদের জন্য একটি বার্ষিক ফটোগ্রাফি কনফারেন্স, এবং একটি অনলাইন রিটেইল স্টোর।
"শুধুমাত্র 'ক্যামেরা হাতে মায়েরা', এই ধারণা থেকে নারী ফটোগ্রাফারদের অবমূল্যায়ন করার চিন্তাটাই অত্যন্ত আপত্তিকর", সারা বলেন। "আমরা শুধুমাত্র বড় বড় যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যবসা করতে আসিনি; আমরা বরং সব সময় চেষ্টা করি কাজের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে এবং কাজটাকে সব রকমভাবে উপভোগ করতে"। গত কয়েক দশকে প্রযুক্তি এবং ফটোগ্রাফির বাজারের ব্যপক পরিবর্তনের কারণে নারীদের পক্ষে এই শিল্পে অংশগ্রহণ করা ও নিজেদের জায়গা তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সারার বক্তব্য অনুসারে, "আমরা আমাদের মানদণ্ড উঁচু করে চলেছি এবং সেই সাথে সাধারণ মানুষকে এই ধারণা দিতে চাচ্ছি যে তারা আসলে কোন কাজের পারিশ্রমিক দিতে যাচ্ছে।ফটোগ্রাফার হতে কী কী যোগ্যতা লাগে সেই ধারণাগুলোকে আমরা পরিবর্তন করে দিচ্ছি। আমরা এটাও বলতে চাই যে শুধুমাত্র পেশাজীবী হলেই একজন ফটোগ্রাফারের যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না"।
রিটেইল
ফটোগ্রাফিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পাশাপাশি রিটেইল সেক্টরেও যে মানুষের প্রত্যাশার পরিবর্তন ঘটেছে তা বুঝা যায়। আগে ক্যামেরা বহন করার ব্যাগগুলো ছিল কালো রঙের, বাক্সের মতো, কাঁধে ঝোলানোর জন্য তৈরি। নারীরা সাধারণত যেভাবে তাদের জিনিসপত্র বহন করে এগুলো মোটেও তেমন ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যায় বিশেষভাবে নারীদের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন রঙে ও ডিজাইনে এই ব্যাগগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এই ব্যাগগুলো যাতে আকর্ষণীয়, সহজে বহনযোগ্য এবং পাশাপাশি নারীর এই নতুন ভূমিকার সাথে মানিয়ে যায় এমনভাবে তৈরি করা হয়।
আজকাল ক্যামেরা স্ট্র্যাপগুলোও বিভিন্ন ডিজাইনে পাওয়া যায়। সেগুলো দেখলেই বুঝা যায় যে নারীদের জন্যই তৈরি। সিল্কের স্কার্ফ, এমব্রয়ডারি করা চামড়ার ফিতা, নকশা করা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি এই ক্যামেরা স্ট্র্যাপগুলো যেমন আরামদায়ক তেমনি সুন্দর। আর শুধুমাত্র চটকদার কাপড় আর উজ্জ্বল রঙের চামড়া দিয়ে তৈরি করাটাই বড় কথা নয়। দ্রুত কাজে লাগানো যায় এমন স্ট্র্যাপ তৈরি করার জন্য সুপরিচিত ব্ল্যাকর্যাপিড নামের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি তাদের স্ট্র্যাপগুলো বিশেষভাবে মেয়েদের উপযোগী করে তৈরি করেছে।
বেশ আগে থেকেই ট্রাইপডগুলোকেও আরও হালকা করে তৈরি করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি কোন কোন প্রস্তুতকারক বিভিন্ন আকর্ষণীয় রঙে ট্রাইপড তৈরি করছে। এমন হতে পারে যে শুধু পন্যকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যই এটা করা হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় ফটোগ্রাফি সরঞ্জামে নারী ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা উৎপাদককারীদের ডিজাইনেও প্রভাব ফেলছে। এই রূপান্তর খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ ফটোগ্রাফারদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ফলাফলস্বরূপ উৎপাদকেরা নারীদের মতো পুরুষদের জন্যেও আকর্ষণীয় আর আরামদায়ক ব্যাগ আর স্ট্র্যাপ তৈরি করছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারী ফটোগ্রাফারদের এভাবে স্বাগতম জানানোর চলটি এখনও ছোট বা মধ্যমমানের ফটোগ্রাফি স্টোরগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় না। ফটোগ্রাফি স্টোরের বেশিরভাগ কর্মচারী, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সব কর্মচারীরই পুরুষ। একবার এই আর্টিকেলটি লেখার জন্য একজন খুচরা ক্রেতা বা ম্যানেজারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করেছিলাম। এই ব্যপারে তাদের উদাসীনতা আর দ্বন্দ্বমূলক মনোভাব লক্ষ্যনীয় ছিল। নিরাসক্ত গলায় বলা একজন বিক্রেতার উত্তরে তা স্পষ্ট, "বলতে গেলে আমাদের সময়ে ফটোগ্রাফিতে কোন পরিবর্তন তো চোখে পড়েনি। সরঞ্জাম হচ্ছে সরঞ্জাম। এটা সবার জন্যেই এক"।
আমার সহকর্মীদের সাথে এই বিষয়ে আলাপ করতে গেলে অনেক নারীই তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান যে ফটোগ্রাফিতে ক্রেতা হিসেবে তাদের কোন গুরুত্বই দেওয়া হয় না। শিক্ষা আর প্রতিপত্তি কোন না কোন এক সময় এই অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দিবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রধান প্রধান উৎপাদক কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে ফটোগ্রাফিতে নারীদের সংখ্যা ও গুরুত্ব বুঝতে পারছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ক্লিকিন মমসের ব্লগের অন্যতম প্রধান স্পন্সর হচ্ছে ক্যানন। যুগের হাওয়া তো এখন স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে।
নারীর অবস্থান
বিষয়টা যদি আসলেই এমন হয়ে থাকে যে আজকাল আরও বেশি নারী ফটোগ্রাফির সরঞ্জাম কিনছে এবং নিজেদের মতো করে এই পেশাটিকে গড়ে নিচ্ছে তাহলে তাদের কাজের ক্ষেত্রটাই বা কোথায়?
নারী ফটোগ্রাফাররা হয়তো খুব বেশি সুপরিচিত নন বা উঁচু শ্রেণীর বানিজ্যিক ফটোগ্রাফিতেও তেমন একটা জড়িত নন, তবে তারা মাতৃকালীন ও নবজাতক শিশুর ছবি তোলার বাজারটি ভালভাবেই দখল করে নিয়েছে। বলা যায়, ফটোগ্রাফির এই নতুন ক্ষেত্রটি তৈরিই হয়েছে নারী ফটোগ্রাফারদের সৌজন্যে। শত শত বছর ধরে পুরুষ গর্ভবতী নারীর ছবি এঁকে আসছে। তবে সেগুলো ছিল ধর্ম বিষয়ক (অন্তঃসত্ত্বা কুমারীমাতা), চিত্র প্রদর্শনীর জন্য আঁকা হয়েছিল সেগুলো (ভেরমীরের "দাঁড়িপাল্লা হাতে নারী" বা পিকাসোর "অন্তঃসত্ত্বা রমণী")। কখনও কখনও ছবিগুলো পরিবারের অর্থসম্পত্তি ও প্রাচুর্যের স্বাক্ষর হিসেবে আঁকা হতো (ইয়ান ভন আইকের "আর্নলফিনি পোট্রেইট")। তবে ১৯৯১ সালে ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত অ্যানি লেবোভিৎজের তোলা অন্তঃসত্ত্বা ডেমি মূরের নগ্ন ছবিটি ফটোগ্রাফির জগতে একটি নতুন ধারার সূচনা করে। আজকাল অন্তঃসত্ত্বা নারীরা নিজেদের আনন্দের জন্যই নিজেদের ছবি তোলাতে চান। আর এই কাজ আরেকজন নারীর চাইতে ভালো কে পারবে?



নারী ফটোগ্রাফাররা নবজাতক ও শিশুদের ছবি তোলার ক্ষেত্রটিও দখল করে নিয়েছেন। সব সময় না হলেও প্রায়ই দেখা যায় এই নারী ফটোগ্রাফাররা নিজেরাও সন্তানের মা। পারিবারিক ছবির এ্যালবামগুলোতে মানুষ কি ধরণের ছবি দেখতে চায় তা বুঝার দৃষ্টি এবং ধৈর্য দুটোই তাদের অপরিসীম। সত্যি কথা বলতে, আজকাল পারিবারিক ছবিগুলোতে যে ধরণের ধারা প্রচলিত রয়েছে সেগুলো এই নারী ফটোগ্রাফারদেরই অবদান। আজকাল নারীরা তাদের জীবনঘেঁষা কাহিনী তুলে ধরতে সুস্থির আনুষ্ঠানিক রীতিতে তোলা ছবি পছন্দ করে না। তারা চান তাদের ছবিগুলো জীবনের গল্পও বলবে। সারা উইকারসনের মতে "এলোমেলো সৌন্দর্য" তুলে ধরবে। এটা পরিষ্কার যে ছবি তোলার জন্য কোন ফটোগ্রাফারকে ভাড়া করা হবে বা কোন ছবিগুলো কেনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যখন পরিবারে নারীর হাতেই থাকে তখন পারিবারিক ছবি তোলার ক্ষেত্রটিতে নারী ফটোগ্রাফারের সাফল্য আটকায় কে?
নারী ফটোগ্রাফারদের রাজত্ব চলছে আরও একটি ক্ষেত্রে, আর তা হল গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি। ফ্যাশন ফটোগ্রাফির রিচার্ড অ্যাভেডনস আর আরভিং পেন্সের মতো হোমরা চোমড়ারাও পোট্রেইট ছবি তোলার ক্ষেত্রে আরও ব্যক্তিবাচক ও অন্তরঙ্গ মনোভাব বেছে নিয়েছেন। লিন্ডসে অ্যাডলার (1985-) ফ্যাশনের জগতে ঝড় তুলেছেন তার সুসজ্জিত মডেলদের দুর্বলতার কোমল প্রকাশের মাধ্যমে। স্যু ব্রাইস (১৯৭০-) ফ্যাশন ফটোগ্রাফির গ্ল্যামারকে প্রতিটা নারীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রত্যেক নারীই তাঁর নিজস্বতায় সুন্দর এবং স্টুডিওতে ফটো শুট করার মতো যোগ্যতা সবাই রাখে। তরুণীদের বিয়ে পূর্ববর্তী ছবি তোলার ধারায় আমরা সব বয়সী সব রকম নারীদের চমৎকার সব অন্তরঙ্গ ছবি পেয়েছি। এগুলো তোলাও হয়েছে নারী ফটোগ্রাফারদের দিয়েই।
একটি অসম্পূর্ণ গল্প
ফটোগ্রাফি জগতে নারীর গল্পের সুখী সমাপ্তি এখনও হয়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে এই শেষ হাসি তারাই হাসবেন। শিল্প জগতে নারী ফটোগ্রাফারদের এখনও খুব বেশি অবমূল্যায়ন করা হয়। ফ্যাশন ও বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফিতে নারীরা যতো বেশিই এগিয়ে আসুক না কেন আজও পুরুষের সংখ্যা এবং আয় অনেক বেশি। নারী ফটোসাংবাদিকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আর এই চিন্তাও খুব বেশিদিন আগের নয় যে ফটোগ্রাফিতে নারী এবং নারীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন থাকা জরুরী। তবে গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমরা স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি যে নারীরা তাদের নিজেদের ভঙ্গিতেই ফটোগ্রাফি মাধ্যমকে গড়ে নিচ্ছে। নারীরা শুরু থেকে এখনও আমাদের জীবনের সমস্ত ঘটনার সাক্ষী। তারা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো স্মরণীয় করে রাখেন ছবি তুলে। রাজনীতি আর সামাজিক প্রথার আড়ালে যে অন্যায় অবিচার চলে সেগুলোর মুখোশ উন্মোচন করেন। অমানবিক সব পরিবেশে মানবতার গল্প বলেন তারা। আর এই নারীরাই ফটোগ্রাফির প্রতি তাদের ভালবাসা নিয়ে বাঁচার উপায় তৈরি করে নিয়েছেন।
একদিক দিয়ে বলা যায় যে আমরা নারী ফটোগ্রাফাররা আসলে আমাদের হারিয়ে যাওয়া রাজত্ব ফিরে পেয়েছি। তবে এই ফিরে পাওয়ার রাস্তায় আমরা নতুন করে এগিয়েও গিয়েছি। এ সব কিছুই বিক্রেতাদের চোখে পড়ছে। আর আমরা এদিকে নারীরা একে অপরকে সাহায্য করে চলছি পেশাগত ও সৌখিনতার দিক থেকে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমাদের এখনও অনেক কিছু করা বাকি। অনেক গল্প বলার বাকি। তবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি অবিরাম।
উল্লেখযোগ্য নারী ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
আইডাব্লিউডি-এর সম্মানে আমরা ফটোগ্রাফারদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি ও সাক্ষাৎকারের একটা সিরিজ তৈরি করছি। আপনারা চাইলে তাতে একবার নজর বুলাতে পারেন।